Desh Bangla 24: তুরাগতীরে আসছেন মুসল্লিরা
,                              সদ্য সংবাদ:

Thursday, January 7, 2016

তুরাগতীরে আসছেন মুসল্লিরা

টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। এ দিন বাদ ফজর আমবয়ানের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম শুরু হবে এবং আগামী ১০ জানুয়ারি (রোববার) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটবে।
প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর তুরাগতীর-সংলগ্ন ইজতেমাস্থলের সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল বুধবার থেকে তুরাগতীরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। তবে ইজতেমায় অংশ নেওয়ার জন্য বিদেশি মুসল্লিদের কেউ কেউ দু-একদিন আগেই ইজতেমাস্থলে এসে পৌঁছেছেন।
এদিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইজতেমা কমিটির সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসন মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায় কার্যকর সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে চার দিন বিরতির পর আগামী ১৫ জানুয়ারি (শুক্রবার) থেকে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। ১৭ জানুয়ারি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।
১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বলতে গেলে নিয়মিতই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মুসল্লিদের চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমাকে দুই পর্বে বিভক্ত করা হলে ওই বছরই প্রথম দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে এ ধারায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টঙ্গীর বিভিন্ন মৌজায় বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১৬০ একর ভূমি বরাদ্দ দেন বলে বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে মুসল্লিদের সুবিধার্থে গতকাল থেকেই বিআরটিসি বিভিন্ন রুটে ২২৮টি স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু করেছে। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এ সার্ভিস অব্যাহত থাকবে বলে বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে। ৬ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলাচলকারী স্পেশাল বাসের মধ্যে তিনটি বাস বিদেশি মুসল্লিদের জন্য সংরক্ষিত থাকছে। আবদুল্লাহপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ২৯টি বাস, শিববাড়ী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ১৩টি, টঙ্গী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ১৭টি, গাজীপুর-চৌরাস্তা, মতিঝিল-ভায়া ইজতেমাস্থল ছয়টি, গাবতলী-গাজীপুর ভায়া ইজতেমাস্থল পাঁচটি, গাবতলী-মহাখালী ভায়া ইজতেমাস্থল ৩৫টি, গাজীপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ২৫টি, মতিঝিল-বাইপাল ভায়া ইজতেমাস্থল আরো ২০টি বাস চলবে।
এ ছাড়া ঢাকা-নরসিংদী ভায়া ইজতেমাস্থল ২০টি, চট্টগ্রাম রোড-সাভার রোড ২০টি এবং ঢাকা-কুমিল্লা রোডে চলবে আরো ১৫টি বাস।
অন্যদিকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের যাতায়াতে সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২৮টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে। পাশাপাশি সব আন্তনগর, মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে অতিরিক্ত ২০টি কোচ সংযোজন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের সদস্যরা তুরাগ নদীর নয়টি স্থানে (পন্টুন) ভাসমান সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ইজতেমা মাঠে স্থাপিত ১২টি উৎপাদন নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি লিটারের বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অজু-গোসলের হাউস ও টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। যেকোনো একটি গ্রিড নষ্ট হলেও সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না। ইজতেমা এলাকায় চারটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং পাঁচটি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমারও সংরক্ষণ করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করবেন। ময়দানের প্রতি খিত্তায় ফায়ার ডিস্টিংগুইসারসহ ফায়ারম্যান, গুদামঘর ও বিদেশি মেহমানখানা এলাকায় তিনটি পানিবাহী গাড়ি, তিন সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, একটি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট এবং পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. পারভেজ আলম জানান, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিয়মিত শয্যা ছাড়াও অতিরিক্ত শয্যা বাড়িয়ে মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতাল মাঠসহ ছয়টি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেবেন। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ইজতেমা মাঠের দায়িত্বে নিয়োজিত মুরব্বি গিয়াসউদ্দিন জানান, তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমায় দেশি মুসল্লি ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা অংশ নিয়ে থাকেন। প্রতিবারের মতো ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিমাংশে বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষভাবে টিনের ছাউনির মাধ্যমে পৃথক কামরা তৈরি করা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গতকাল থেকে পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য ইজতেমাস্থলে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছেন। এ ছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ